History of Panchetgarh Raj Bari. Pataspur. Purba Medinipore. West Bengal.
ঐতিহাসিক তথ্য অনুসারে অবিভক্ত মেদিনীপুরে পটাশপুর পরগনার একটি প্রধান অংশ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আদেশের মাধ্যমে চৌধুরী মুরারী মোহন দাস মহাপাত্র পরিবারের নিয়ন্ত্রণে আসে । তিনি পরগণাদার হিসেবে পরিচিত হন। সরকারি নথি থেকে এই প্রমাণিত হয় যে, চৌধুরী মুরারী মোহন দাস মহাপাত্র কে মুঘল দরবারে তার সেবা ও উপযোগিতার জন্য এই অঞ্চল তাঁকে সম্মান স্বরূপ প্রদান করা হয় ।
মুরারী মোহন দাস মহাপাত্র মূলতঃ ওড়িশার অন্তর্গত আটগড় (পুরী নিকটবর্তী) অঞ্চলের পরগনাদার নির্বাচিত হন এবং "চৌধুরী" উপাধি গ্রহণ করেন । পরবর্তীকালে পটাশপুর পরগনার খাড় নামক গ্রামে তিনি বসতি স্থাপন করেন । এর কিছু বছর পর খাড়-এর নিকটবর্তী গ্রাম পঁচেটে তিনি এক রাজকীয় প্রাসাদ তৈরি করেন যা পঁচেটগড় রাজবাড়ী নামে খ্যাত হয়। ওখান থেকেই পরগণাদার তাঁর অফিসিয়াল কাজকর্ম শুরু করেন ।
লোক গাথা অনুসারে, চৌধুরী দাস মহাপাত্ররা এক নির্জন গভীর জঙ্গলে এক প্রাচীন শিব মন্দির আবিষ্কার করেন । মন্দিরকে নব রূপে সংস্কার করে চৌধুরী পরিবার তার আশেপাশে প্রশাসনিক সদর দপ্তর ও রাজকীয় আবাস নির্মাণ করেন । এখানে লক্ষণীয় যে, দাস মহাপাত্র রা বর্নে "করন" ও শিবের উপাসক ছিলেন । পুরাতন এই শিব মন্দিরকে কেন্দ্র করে "পঞ্চ শিব মন্দির" স্থাপন করেন এবং যার থেকে পঁচেটগড় নাম উদ্ভূত হয় ।
এর পাশাপাশি তাঁরা রাজবাড়ী ও গড়হাভেলি নির্মাণ করেন । গড়হাভেলি থেকেই প্রশাসনিক কাজকর্ম হতে থাকে । কালক্রমে তা প্রশাসনিক কেন্দ্র ও রাজপরিবারের আবাসস্থল হয়ে ওঠে । বহু উত্তরসূরী এই হাভেলী তে রয়েছেন যা বর্তমানে "রাজবাড়ী" নামে খ্যাত ।
এর মধ্যবর্তী কালে অল্প সময়ের জন্য এই অঞ্চল মুর্শিদাবাদের নবাবের অধীনে আসে । তারপর, হলকারের মারাঠা কোর্ট- ইন্দোর এর তত্ত্বাবধান করে । কিন্তু, চৌধুরী পরিবার থেমে না থেকে তাদের অগ্রগতির মাধ্যমে ইন্দোরে রাণী অহল্লা বাই এর রাজসভায় তাদের স্বপক্ষে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করেন । ইন্দোর কোর্ট তাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে জাইগীরদার দাস মহাপাত্র পরিবারকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন ।
এরপর, ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রশাসক কোলোনেল ফেন উইক কামারদা, পটাশপুর,ভোগরাই ও জামকোন্ডা অধিকার করে নেয় । ব্রিটিশদের অধীনেই জমিদারি প্রথা চালু হয় এবং পরবর্তীকালে এই সমস্ত অঞ্চল দাস মহাপাত্র পরিবার দ্বারাই পরিচালিত হয় । ব্রিটিশদের রাজত্বকালে পটাশপুর পরগনা ছিল জলেস্বর বন্দর, বালেস্বর সরকারের অধীন ।
সেই সময়ে ব্রিটিশরাজ চৌধুরী দাস মহাপাত্র পরিবারকে আরও একটি জমিদারী অঞ্চল উপঢৌকন স্বরূপ প্রদান করে যার নাম ভোগরাই । যা কিনা অবিভক্ত বাংলা ওড়িশার বালেশ্বর জেলার অন্তর্ভুক্ত যখন ব্রিটিশদের প্রশাসনিক রাজধানী শহর ছিল কোলকাতা ।
কালক্রমে পঁচেটগড় ভারতের শিল্প, সংস্কৃতি ও সংগীত শিক্ষার প্রধান অঞ্চলে পরিণত হয়। কথিত আছে হিন্দুস্তানের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দিকপাল পুরুষগণ—ওস্তাদ ফকির বক্শ, কানিয়ালাল ধেরী, কাশীনাথ মিশ্র, ওস্তাদ আব্দুল্লাহ খান সাহেব,হালকেরাম ভাট, চন্দ্রিমাপ্রসাদ এবং বিষ্ণুপুর ঘরানার যদুভট্টরা পঁচেটগড়ে আসেন এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন ।
ষোড়শ শতাব্দীর শুরু থেকে পাঠান, মুঘল, মারাঠা ও ব্রিটিশ শাসনকালে অবিচ্ছিন্নভাবে স্থানীয় শাসনের অন্যতম কেন্দ্র এবং চৌধুরী/দাসমহাপাত্র পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্মীয়, সামাজিক, জ্ঞান-বিদ্যা ও মার্গ সঙ্গীত চর্চার উল্লেখযোগ্য পীঠস্থান বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পটাশপুর-২-এ অবস্থিত “পঁচেটগড়” । এই সুপ্রাচীন বিশিষ্ট স্থাপত্যশৈলীর মন্দিরময় “পঁচেটগড়” – এর শ্রী শ্রী কিশোর রায় জীউ মন্দির, ঝুলনমন্দির, শ্রী শ্রী পঞ্চেশ্বর শিব ও নারায়ন জীউ মন্দির (মধ্য অষ্টাদশ শতক), এবং শ্রী শ্রী মা শীতলা পঞ্চরত্ন মন্দির (উনবিংশ শতক) এবং রাজবাটী বা গড়হাভেলী এবং তৎসংলগ্ন পরিসর ওয়েস্ট বেঙ্গল হেরিটেজ কমিশন কর্তৃক ওয়েস্ট বেঙ্গল হেরিটেজ কমিশন আইন ২০০১ মোতাবেক ২০১৮ সালে ঐতিহ্যমন্ডিত/হেরিটেজ হিসাবে ঘোষিত হলো ।
For More details pls call on +917044943794 or visit official website Panchetgarh.com